ষড়্ঋতুর এই দেশ নিয়ম অনুযায়ী ছয়টি ঋতুর ছয় ধরনের আচরণ। এই ছয় ঋতু পরিবর্তনের সময় মৌসুমি বায়ুর ধারা বদলে যায়। সেই সঙ্গে তাপ ও চাপের পরিবর্তন হয় বলে আমাদের স্বাস্থ্যের কিছু পরিবর্তন হয়; বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সর্দি-কাশি-জ্বর বা ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি, তাদের ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।
আমরা সাধারণত যে ধরনের ফ্লুতে আক্রান্ত হই, তা খুব বেশি ঘাতক নয়। কিন্তু এটা সহ্য করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক নিয়ম হচ্ছে, ফ্লু হয়েছে মানে শরীরে অচেনা কিছু প্রবেশ করেছে। এই অবস্থায় শরীর তার নিজের নিয়মে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপ তৈরি করে সেই ‘অচেনা’ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে চায়। সে ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর জয়ী হয়। নয়তো একটু সময় নিয়ে কাজ করে জয়ী হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, শরীরের এতে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। বিশেষ ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোগান্তির কারণ হয়। ফ্লুতে আক্রান্ত হলে প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব।
ফ্লুর লক্ষণ
- সাধারণত জ্বরের প্রকোপ বেশি হয়।
- মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।
- শরীরে কাঁপুনি এবং ঠান্ডা লাগতে পারে।
- গলা খুসখুসে হয়ে যায় এবং গিলতে সমস্যা হয়।
- শুকনা বা কফযুক্ত কাশি হতে পারে।
- নাক বন্ধ হয়ে যায় বা নাক দিয়ে পানি ঝরে।
- শরীর খুব দুর্বল ও অবসাদগ্রস্ত অনুভূত হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে
- জ্বরের প্রকোপ বেশি হতে পারে।
- বারবার বমি হতে পারে।
- পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- শিশু অস্বস্তিতে থাকে এবং চঞ্চল হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষ ক্ষেত্রে
- জ্বর দীর্ঘদিন থাকে।
- শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
- বুকে ব্যথা হয়।
- শরীরে ফুসকুড়ি হয়।

ফ্লু সারাতে প্রাকৃতিক উপায়
লবণ-পানি দিয়ে গার্গল করা: ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ামাত্রই গলায় অস্বস্তি শুরু হয়। সাধারণ ভাইরাস প্রথমে গলায় সংক্রমণ ঘটায়। তাই শরীরে তাপ উঠুক বা না উঠুক, এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে গার্গল করতে হবে। কিছুক্ষণ গার্গল করলেই গলা থেকে আঠালো লালা বের হয়ে যাবে। যতক্ষণ আঠালো লালা বের হয়, ততক্ষণ শুধু গার্গল করতে হবে, দিনে কমপক্ষে তিনবার। এতে গলার অস্বস্তি ও ব্যথা কমে আসবে।
গরম পানিতে পা দিয়ে বসে থাকা: এক বালতি কুসুম গরম পানি নিয়ে চেয়ারে বসে সেই পানিতে দুই পা ডুবিয়ে বসে থাকুন অন্তত ৩০ মিনিট। পানি ৩০ মিনিট একই তাপে রাখতে বালতির পানিতে কিছুক্ষণ পরপর একটু করে গরম পানি মিশিয়ে নিন।
গরম তরল খাবার খাওয়া: স্যুপ, চা, কফি ইত্যাদির মতো গরম তরল খাবার গলাব্যথা ও কাশি উপশমে সাহায্য করে।
আদা, মধু, লেবুসহ গরম পানি পান করা: পানির সঙ্গে আদা, মধু ও লেবু মিশিয়ে গরম করে পান করলে গলাব্যথা ও কাশি কমে। এটি শিশুদের জন্য কার্যকর।
- তুলসী চা পান করা: তুলসী পাতা ছেঁচে এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো পান করতে হবে। তুলসী চা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- বিশ্রাম নেওয়া: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। ঘুম ভালো হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা: শরীর হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- ভাপ নেওয়া: গরম পানির ভাপ নেওয়া গলাব্যথা ও নাক বন্ধ উপশমে সাহায্য করে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: টক ফল, সবজি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে শরীর শক্তিশালী করুন। ভাত, রুটি, দুধ ও চিনিজাতীয় সব খাবার বন্ধ রাখুন।
ফ্লুতে স্বাস্থ্য পরিচর্যা
- সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলুন।
- অসুস্থ ব্যক্তি থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন।
- হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় টিস্যুবা কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন।
- শরীরকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খানএবং পর্যাপ্ত ঘুমান।
পরামর্শ দিয়েছেন: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
আলমগীর আলম
ন্যাচারোপ্যাথি ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ
আমি আলমগীর আলম, আকুপ্রেসার ও ন্যাচারোপ্যাথি নিয়ে কাজ করি, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এটা প্রমাণিত যে, আমরা বর্তমান সময়ে যে খাদ্যভাস, জীবনাচার নিয়ে আছি তাতে সুস্থ থাকা অসম্ভব। আমাদের প্রচলিত চিকিৎসা ব্য...
View author profileRelated Posts
সঠিক সময়ে ডিনার সারুন, ওজন ছাড়াও কমবে অনেক সমস্যা...
Aug 12, 2025
বাসকের ঔষধি গুণ
Aug 12, 2025
পেটের সমস্যায় একটা এলাচি !
Aug 12, 2025